জীবনের অন্য পৃষ্ঠা\\কামদেব

বাংলা সেক্স গল্প,Bānlā sēksa galpa,যৌন গল্প,Discover endless Bengali sex story and novels. Browse Bengali sex stories, bengali adult stories ,erotic stories. Visit theadultstories.com
User avatar
kamdevbaba
Novice User
Posts: 83
Joined: 16 Oct 2014 16:54

Re: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা\\কামদেব

Unread post by kamdevbaba » 11 Sep 2016 17:32

[৮]


প্রথমদিন তাড়াতাড়ি ফিরে আসে উমানাথ।মনীষা জিজ্ঞেস করে,ঠাকুর-পো কেমন লাগল অফিস?
ঘেমো জামা খুলে চোখে মুখে জল দিয়ে বসতেই মনীষা চা নিয়ে ঢুকলো।
--বৌদি আগে ভাবতাম খুব বুঝি খাটতে হবে।
--কদিন যাক,নেশা ধরে যাবে।দেখছো না তোমার দাদাকে?পাঁচটায় ছুটি বাড়ী ফিরতে ফিরতে আটটা-নটা বেজে যায়।এ্যাই জানো আজ রতির সঙ্গে দেখা হল।
--কি বলল?
--কি বলবে?আমিই মজা করে বললাম,কারো সঙ্গে প্রেম-টেম করছিস নাতো?একেবারে ঘেমে নেয়ে একসা।খিল খিল করে হেসে ওঠে মনীষা।
--ও খুব লাজুক আর ইমোশনাল।সামান্য কিছু হলেই চোখে জল চলে আসে।
--ইমোশন থাকা ভাল আবার--।
--আবার মানে?উমা জিজ্ঞেস করে।
--এক একসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
--কেউ একটু দরদ দেখালে একেবারে কেলিয়ে পড়ে।উমার মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে যায়।
--এসব কি বলছো?ঠাকুর-পো ভাষা সংযত করো।তোমার ভাই-পো বড় হচ্ছে।
চা টিফিন খেয়ে বেরিয়ে পড়ল উমানাথ। পঞ্চাদার দোকানে এসে দেখল আড্ডা জমজমাট। সবাই রতিকে নিয়ে পড়েছে। শুভ বলল, এতক্ষণ কোথায় ছিলি? কিরে রতি ডুবে ডুবে প্রেম করছিস নাকি?
রত্নাকর চমকে ওঠে,শুভ কেন একথা বলল?সামলে নিয়ে রত্নাকর বলে,এখানে বসেই সব বুঝে গেলি?
--গায়ের গন্ধে বোঝা যায় বস।
--সবাইকে তোর মত ভাবিস নাকি?রত্নাকর সকলকে এড়িয়ে নিজের জামার গন্ধ শোকে।ঘামের গন্ধ ছাড়া আর কোনো গন্ধ পায়না।
বঙ্কা মাঝখানে নাক গলায়,লেখকদের এত মাথা গরম করলে চলে?
শুভ বলল,রাগ করছিস কেন?বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে ঠাট্টা ইয়ার্কি করা যাবেনা?সবাই রোজিকে নিয়ে আমাকে যখন বলে আমি কিছু বলেছি?পঞ্চাদা লেখককে একটা চা দাও।
--আমি কি বাদ? উমানাথ দোকানে ঢুকে বলল।
--আরে তুমি?পঞ্চাদা দুটো চা করো।বলো অফিস কেমন লাগল?
--তোরা খাবি না?
--আমাদের এক প্রস্থ হয়ে গেছে।আবার পরে খাবো।
রত্নাকরের কোনো কথা কানে যায় না সে ভাবে রোজি আর জানু এক নয়।জানুর কথা কাউকে বলা যাবেনা।পরক্ষনেই শঙ্কা হয় আবার দেখা হলে সব ভুলে যাবে না তো?
উমানাথ মাছি তাড়ানোর মত বলল,ছাড়তো অফিস।শোন এবার কাজের কথা বলছি। তোদের মেনু করার দরকার নেই?
সুবীর বলল,তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো।
--আজ বুধবার।আগামী রবিবার দুপুরবেলা আমাদের বাসায় সকলের মধ্যাহ্ন ভোজন।
--তোমার বাসায়? দাদা থাকবেনা?
--থাকলে থাকবে।বৌদি তোদের যেতে বলেছে,ব্যাস।উমা বলল।
--বৌদি আমাকে কিছু বলল নাতো?রত্নাকর বলল।
--তুমি কে হরিদাস?তোমাকে আলাদা করে বলতে হবে?বঙ্কা টিপ্পনী কাটে।
উমা বিরক্তি প্রকাশ করে,কি আরম্ভ করলি তোরা?কলেজ কবে খুলছে?
--সোমবার।
--ব্যাস।তাহলে রবিবার?কিরে রতি অসুবিধে নেই তো?
--অসুবিধের কি আছে?আমি আসছি,অনেক সকালে বেরিয়েছি।
রত্নাকর দোকান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামে।উমাদা পাশে এসে জিজ্ঞেস করে, তোকে কেমন অন্যরকম লাগছে,কিছু হয়েছে?
ফ্যাকাশে হেসে বলল রত্নাকর,কি আবার হবে?
--সেদিন কিছু খেয়েছিলি?
অবাক হয়ে তাকায় রত্নাকর।উমানাথ বলল,ঐ যেদিন খুব বৃষ্টি হোল?
রত্নাকর বুঝতে পারে সঞ্জয় হয়তো কিছু বলেছে।হালকাভাবে বলে,কি খাবো?রোজ যা খাই তাই খেয়েছি।তোমায় কেউ কিছু বলেছে?
--বৌদি বলছিল,লেখকরা খুব আবেগ প্রবণ।
--মনীষাবৌদিকে আমার খুব ভাল লাগে।
--আবেগে মানুষ অঘটনও ঘটাতে পারে।
--মানে?
--বৌদি একটা সুন্দর কথা বলেছে।
--কি কথা?
--এক সময় সতীদাহ প্রথা ছিল।অনেক ভীরু রমণী আবেগের বশে স্বামীর চিতায় আত্মবিসর্জন দিত অবলীলায়।
--ধর্মীয় আবেগ।
--যাইহোক আবেগ। রবিবার,মনে আছে তো?
উমাদা চলে গেল পঞ্চাদার দোকানে।মনীষাবৌদির সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে।উমাদা ভাগ্যবান অমন বৌদি পেয়েছে।চোখের সামনে দাউ-দাউ চিতার ছবি ভেসে ওঠে,লক লক করছে লেলিহান শিখা।জনাকে আগুনের শিখার মত লাগে।আবার দেখা হলে মিলিটারি আণ্টির মত হয়তো আজকের কোনো কিছুই মনে থাকবে না।নজরে পড়ল রাস্তার একধার দিয়ে রোজি হাটতে হাটতে তাকে আড়চোখে দেখছে।সম্ভবত শুভর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে।নটা বেজে গেছে এতরাতে বেরিয়েছে কিসের টানে? জানকেও তার দেখতে ইচ্ছে করছে।প্রেম হলে কি এমন হয়?শুভ কি রোজির সব দেখেছ?রত্নাকর ক্লান্ত পায়ে বাড়ীর দিকে হাটতে থাকে।
উমানাথ ভাবে রতিকে একটা ট্যুইশনি জোগাড় করে দেওয়া দরকার।আজকাল সবাই চায় স্কুল টিচার।স্কুল টিচার হলেই ভাল পড়াবেন?স্কুলে পড়াতেন সুরেনবাবু স্যার।উমানাথের মনে পড়ল।অঙ্ক শেখাতেন।পটপট করে বোর্ডে অঙ্ক করে দিতেন কিন্তু কিভাবে করছেন কিছুই বুঝতে পারত না উমানাথ।শুভ হেলান দিয়ে বসে মাঝে মাঝে দৃষ্টি চলে যাচ্ছে রাস্তার দিকে।বঙ্কার নজর এড়ায় না।
জিজ্ঞেস করে,কি বস কথা আছে?
--নিজের চরকায় তেল দে।
বঙ্কা চুপ করে যায়।উমানাথ রতি আর বঙ্কা ছাড়া সকলেরই কেউ একজন আছে।বয়সে বড় উমানাথ কিছু বলেনা রতির অন্যের ব্যাপারে তেমন কৌতুহল নেই।বঙ্কাটার সব ব্যাপারে কৌতুহল।শুভ ঝট করে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ল।বঙ্কা লক্ষ্য করে,দূরে রোজি হেটে চলেছে।আগেরটা কেটে যাবার পর শুভ রোজিকে ধরেছে।মিলি শুভকে ভাগিয়ে দিয়েছে,শুভ বলে সেই নাকি মিলিকে ভাগিয়েছে।দলের মধ্যে রতিটাই সব থেকে লাল্টু দেখতে অথচ ওর কিছু হলনা কেন কে জানে?রতিটা একটু ক্যালানে টাইপ।
রোজি আগে আগে হাটছে শুভ একটু পিছনে।শুভ পিছন থেকে ফিসফিস করে বলল,ডানদিকে--ডানদিকে।
রোজি দাঁড়িয়ে পড়ে,ডানদিকে মানে নির্মীয়মান ফ্লাটে ঢুকতে বলল।শুভর মতলব বুঝতে পারে।শুভ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,দাঁড়িয়ে পড়লে?
--না না আজ নয়।পিকনিকের দিনের ব্যাপারটা মা মনে হয় জেনে গেছে।
--তাতে কি হয়েছে?আমরা কি অন্যায় করেছি?
--তা নয়।বিয়ের আগে মানে--।
--তার মানে তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা?
--তোমাকে নয় নিজেকে বিশ্বাস করিনা।
--তার মানে?
--কিছু একটা হয়ে গেলে মুখ দেখাতে পারবো?
--তুমি আমাকে এত ছোট ভাবো?আমি কি ঐসব করার কথা বলেছি?

উমানাথ দোকানে ফিরে শুভকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে,শুভ চলে গেছে?
বঙ্কা অদ্ভুত ভঙ্গী করে বলল,শুভ এখন গোলাপের গন্ধ নিচ্ছে।
উমা বুঝতে পারেনা,সুখেন বলল,সব ব্যাপারে চ্যাংড়ামি।রোজির সঙ্গে গেছে,এখুনি এসে পড়বে।
রত্নাকর বাসায় ঢুকতে মা জিজ্ঞেস করল,সেই কখন বেরিয়েছিস,এতক্ষনে সময় হল? আমি এদিকে ভেবে মরি।
--সন্ধ্যেবেলা এসেছি।পঞ্চাদার দোকানে ছিলাম।এত ভাবো কেন,আমার কি হবে?
--তোমার কিছু হবেনা,ভাবি যখন থাকবনা তখন তোর কি হবে?
রত্নাকর ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,কথায় কথায় তুমি একথা বলো কেন?আমার শুনতে ভাল লাগে?
মনোরমা ছেলের মুখের দিকে মমতাভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।ঠোট ঈষৎ প্রসারিত করে হেসে বললেন,বাবা মানুষের কথা কি বলা যায়?যা ঘরে যা।এখন চা খাবি নাকি?
নির্মীয়মান বাড়ি থেকে বেরিয়ে রোজি বলল,কি করলে বলতো?জামার বোতামটা ছিড়ে গেছে।
--বাড়ি গিয়ে সেলাই করে নেবে।শুভ বলল।
--আহা মা যদি দ্যাখে?
--কিচছু হবেনা।প্যাণ্টি তো ছিড়িনি।
--খালি অসভ্যতা।প্যাণ্টি ছিড়তে দিলে তো?
সুরঞ্জনার খাওয়ার পাট শেষ।ললিতাও খেয়ে শুয়ে পড়েছে।কম্পিউটার খুলে বসলেন।
কটা বাজে এখন?মনে হয় অফিসে।সুরঞ্জনা টাইপ করেন,
Hello
সাড়া দিচ্ছেনা,ব্যস্ত নাকি?একটু পরেই ফুটে ওঠে,
Good evening,mom how are you?
very well how are you?
health well? arthritis problem?
Do not tension no a problem. sorry mom I can not go this year.
OK.
his workload and tight schedule.
When the time will come when there will be all right.
are you angry?
Do not worry for me.
now I am in office,bye
পলি এবছর আসছেনা।প্রতি বছরই বলে সামনের বছর।কিন্তু সময় হলে নানা অজুহাত।
আলমারি খুলে একটা সার্টিনের ড্রেসিং গাউন বের করেন।মলি এনে দিয়েছিল, একদিনও পরেননি।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দু-হাত ঢুকিয়ে পরলেন।সামনে বোতাম নেই।কোমরে ফিতে দিয়ে বাধতে হয়।মনটা আজ বেশ খুশি খুশি।ছেলেটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে?
রত্নাকর ঘুমায়নি।খাওয়া দাওয়ার পর তার ডায়েরী লেখা অভ্যেস।সামনে ডায়েরী খোলা,গভীর চিন্তায় ডুবে আছে।
বিবাহে দেওয়া-নেওয়া প্রেমে কেবল দেওয়া।জনার কথাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে।জনার সঙ্গে তার প্রেম,হাসি পেল।মনের মধ্যে একটা আকুলতা আছে তার মানেই সেটা প্রেম?মেয়ে পটিয়ে কি প্রেম হয়?শুভর সঙ্গে মিলির একসময় প্রেম ছিল।তারপর জোর করে অসভ্যতা করতে গেলে মিলি ওর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে।একে কি প্রেম বলা যায়?
নিজে প্রেমের গল্প লিখেছে অথচ প্রেম নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই ভেবে রত্নাকর অবাক হয়।মিষ্টি কথা বলে তাকে দিয়ে ম্যাসাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য এই কৌশল।রত্নাকর বোঝেনা তা নয় আসলে মুখের উপর বলতে মায়া হয়।রত্নাকর মনে মনে হাসে,সে নিজেই আজ দয়া মায়ার পাত্র। সব কিছুকে আমরা ভাল মন্দ ইতিবাচক নেতি বাচক দিয়ে বিচার করি কিন্তু ভাল মন্দ মিশিয়েই মানুষ।সেই বাদলার দিন মিলিটারি আণ্টির যে চরিত্র সামনে এল তাতো আণ্টির ভিতরেই ছিল। লোকে কি বলবে ভেবে বাইরে বেরোতে পারছিলনা।অনুকূল পরিবেশ পেয়ে বেরিয়ে পড়েছে।মিলিটারি আণ্টির প্ররোচনা ছিল,না থাকলে হয়তো ঘটনাটা ঘটতো না।তাহলেও আমার মধ্যে কি ইচ্ছেটা সুপ্তভাবে ছিলনা তা কি জোর দিয়ে বলা যায়?লোকলজ্জার ভয়ে বা অসম্ভব বিবেচনা করে অনেক ইচ্ছেকে আমরা কি জোর করে দাবিয়ে রাখিনা?
ফোন বাজতে দেখল,জনা। ধরবে কি ধরবে না ভাবছে,ফোন বেজেই চলেছে।ফোন তুলে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
--ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
--না না শুয়ে শুয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম।
--আমারও ঘুম আসছে না।বুকের মধ্যে কেমন করছে--শুনতে পাচ্ছো?
রত্নাকরের পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে, ঘুমোবার চেষ্টা করো জানু।
--কাল আসবে তো?
এক মুহূর্ত ভেবে ফিস ফিস করে বলল,এখন রাখছি।মা আসছে।

User avatar
kamdevbaba
Novice User
Posts: 83
Joined: 16 Oct 2014 16:54

Re: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা\\কামদেব

Unread post by kamdevbaba » 11 Sep 2016 22:26

[৯]




]রত্নাকর শুয়ে শুয়ে মায়ের কথা ভাবে।বয়স অনুপাতে শরীর ভেঙ্গে গেছে।মনে শান্তি না থাকলে শরীরে তার প্রভাব পড়বে।জনা যেমন বলছিল সেও তেমনি বলে দিয়েছে।কে জানে বিশ্বাস করেছে কিনা?খুশিদি বলত,তুই গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারিস না।অনেকদিন পর মনে পড়ল খুশিদির কথা।কত কাছের মানুষ ছিল এখন পাঞ্জাবের ফিরোজপুরের কোথায় কে জানে।পাঞ্জাবী শুনলে প্রথমেই ভাংড়া নাচের কথা মনে আসে কিন্তু খুশিদির রবীন্দ্র সঙ্গীত খুব পছন্দ।অবাঙালী কোনো মেয়েকে অমন মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে দেখেনি কখনো। খুশিদি একটু রাফ টাইপ মেয়েদের মত কোমল স্বভাব নয়।হয়তো পাঞ্জাবের জল হাওয়ার গুণ।বাড়ীতে এসেছিল শেষ দেখাটা হল না। মিলিটারি আণ্টির মত জনাও আর পাত্তা দেবেনা ভেবেছিল। ফোন পেয়ে একটু অবাক হয়েছে।সঞ্জয়ের জন্য কষ্ট হয়।ওর মা বোধহয় আর উঠে বসতে পারবেনা।টুনি ক্লাস এইটে পড়ে।ঐটুকু মেয়ে রান্না করে ভেবে চোখে জল চলে এল।রান্না ছাড়া সঞ্জয় অবশ্য আর সব কাজ করে।কাল যাবে কিনা ঠিক করতে পারছে না।লতিকা মেয়েটার স্বভাব চরিত্র ভাল না।পর মুহূর্তে মনে হল তার নিজের চরিত্রই বা কেমন? তার একটুও ইচ্ছে ছিলনা জোর করে করিয়েছে বললে কেউ বিশ্বাস করবে?
নন্তু না ঘুমানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।অবশ্য কালিনাথের বেশি সময় লাগেনা।পাছার কাছে বসতে মনীষা হাটু ভাজ করে থাকে।তারপর মিনিট সাত-আট পরেই ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে।মনীষা বাথরুমে গিয়ে ধুয়ে এসে সবে শুয়েছে,হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল,সাড়ে-বারোটা।এত রাতে কে হতে পারে?বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,কে-এ?
বাইরে থেকে আওয়াজ এল,উমাদা--উমাদা।
কপালে ভাজ পড়ে,মনীষা এদিক ওদিক দেখে দরজা খুলে চমকে ওঠে,সঞ্জয় আলুথালু চুল।মনীষা বলল,কি হয়েছে?তুমি অমন করছো কেন?
--বৌদি মার অবস্থা ভাল নয়,একটু উমাদাকে ডেকে দেবে?
--ভিতরে এসে বোস।আমি ডাকছি--।
ইতিমধ্যে উমানাথ ঘুম থেকে উঠে এসেছে,কি ব্যাপার রে সনজু?
--মা কাটা পাঠার মত ছটফট করছে,কি করবো বুঝতে পারছিনা।
--তুই বোস।বৌদি কিছু টাকা দাওতো?
গায়ে জামা গলিয়ে সঞ্জয়কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।ঠাকুর-পোর চলে যাবার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মনীষা।অথচ ওর দাদার মধ্যে অন্যের জন্য কোনো ফিলিংস নেই।
ডা.ব্যানার্জির বাড়ীতে তখনো আলো জ্বলছে।এত রাতে ঘুমাননি নাকি?বেল বাজাতে বেরিয়ে এলেন ডা.ব্যানার্জি,দরজার আড়ালে সোমলতা।ডা.ব্যানার্জি বললেন,ও তোমরা?কি ব্যাপার?
--ওর মার পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ডাক্তারবাবু।উমানাথ বলল।
--হসপিটালে নিয়ে যাও।ডাক্তার ব্যানার্জি বললেন।
আড়াল থেকে সোমলতা বেরিয়ে এসে বলল,বাপি কি হয়েছে না জেনে হাসপাতালে চলে যাবে?
ডা.ব্যানার্জি চিন্তিতভাবে বললেন,তুই কি বলছিস একবার দেখে আসব?
--অবশ্যই।নাহলে কি করে বুঝবে?
--আচ্ছা চলো।
--উমাদা তুমি একটু দাঁড়াও।সোমলতা ভিতর থেকে একটা এ্যাটাচি ব্যাগ এনে উমানাথের হাতে দিয়ে বলল,বাপি কিছুক্ষন আগে চেম্বার থেকে ফিরেছে।
ডাক্তার ব্যনার্জি এ্যাটাচি খুলে প্রেশার নিলেন,স্টেথো দিয়ে পরীক্ষা করে বললেন,এত রাতে ওষূধ কোথায় পাবে?
--আপনি লিখে দিন ব্যবস্থা হয়ে যাবে।কি হয়েছে ডাক্তারবাবু?
--কত কি হতে পারে।ইউএসজিটা করাও দেখি কি ব্যাপার।আলসার হতে পারে আবার--।
--আবার কি ডাক্তারবাবু?
--কাল সকালে টেস্টটা করাও।
ডা ব্যানার্জী বাসায় ফিরতে সোমলতা হাত থেকে এ্যাটাচিটা নিল।ড.ব্যানার্জি পকেট থেকে দুটো একশো টাকার নোট বের করে মেয়ের হাতে দিল।সোমলতা নোটদুটো দেখে বুঝল ফিজ নিয়েছে।জিজ্ঞেস করে,কি হয়েছে বাপি?
--আলসার আবার ম্যালিগ্ন্যাণ্টও হতে পারে।দেখা যাক টেষ্ট করে কি বেরোয়।
ম্যালিগন্যাণ্ট?সোমলতার চোখ ছল ছল করে উঠল।সঞ্জয়ের মা অনেকদিন ধরে ভুগছে।ক্যান্সার হলে বেচারি কি যে করবে?
দোকান খুলিয়ে ওষুধ এনে খাইয়ে দিতে যন্ত্রণা কিছুটা উপশম হল।সঞ্জয় বলল, উমাদা তুমি যাও।কাল তোমার আবার অফিস আছে।ও তোমার টাকাটা--।
--ঠিক আছে পরে দিবি।সকালে সোনোগ্রাফিটা করাবি।
সঞ্জয় রাতে ঘুমায় না। বাবা আর টুনিকে অনেক বলে ঘুমোতে পাঠিয়েছে।মায়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কত কথা মনে পড়ে।দেখতে দেখতে জানলা দিয়ে ভোরের আলো এসে পড়ে ঘরের মেঝেতে।বীনাপাণী চোখ মেলে দেখলেন,ছেলে বসে বসে ঝিমোচ্ছে।
সঞ্জয় মাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে,ঘুম হয়েছিল?
বীনাপানি হাসলেন।সঞ্জয় জিজ্ঞেস করে,হাসছো কেন?
--আমি ঘুমোই নি,চোখ বুজে ছিলাম।শিয়রে ছেলে জেগে থাকলে কোন মা ঘুমোতে পারে?
সঞ্জয় ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে ফুপিয়ে কেদে ফেলে।
ঘুম থেকে উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে চা খেয়ে রত্নাকর ভাবল,যাই একটু ঘুরে আসি। কদিন পর কলেজ খুলে গেলে সকালে বেরনো বন্ধ।নীচে নেমে চমকে ওঠে।ভুত দেখছে নাতো?বাড়ীর নীচে রাস্তার ধারে সোমলতা দাঁড়িয়ে কেন?কাছে যেতে মৃদু হেসে সোমলতা জিজ্ঞেস করে,ভাল আছো?
--হ্যা তুমি এখানে?কি ব্যাপার?
--ব্যাপার কিছুই নয়।ওকে বাসে তুলতে যাচ্ছিলাম।সিগারেট কিনতে গেছে তাই--।
রত্নাকর দেখল উলটো দিকের দোকানে একটি সুপুরুষ যুবক, নাকের উপর চশমা।লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে।রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,রিলেটিভ?
--না না,বাপির বন্দুর ছেলে।কাল রাতে আমাদের বাড়িতে ছিল।
রত্নাকরের মন খারাপ হয়।যুবকটি এক রাশ ধোয়া ছেড়ে রাস্তা পেরিয়ে এদিকে আসছে। যুবকটি কাছে এলে সোমলতা বলল,সমু পরিচয় করিয়ে দিই।রত্নাকর সোম,আমরা এক স্কুলে পড়তাম।সোমনাথ মুখার্জি হবু ডাক্তার--ন্যাশনালে ইণ্টারণশিপ করছে।
যুবকটি হেসে করমর্দন করে বলল,সোমুর কাছে আপনার কথা শুনেছি।
--জানো রতি একজন লেখক।
সোমনাথ বলল,তাই?আমি অবশ্য একেবারে বেরসিক।স্কুলে যা একটু গল্প কবিতা পড়েছি।
--ও হ্যা শুনেছো,সঞ্জয়ের মা খুব অসুস্থ।উমাদা কাল রাতে বাপিকে ডাকতে এসেছিল।আসি আবার পরে কথা হবে?
ওরা বাস রাস্তার দিকে চলে গেল।বেকুবের মত হা-করে তাকিয়ে থাকে রত্নাকর।বাপির বন্ধুর ছেলে,ডাক্তারি পড়ে।কয়েক বছর পর হয়তো অন্য পরিচয় হবে।বাপির নয় বলবে আমার--।বেশ মানাবে দুটিতে।মনে মনে বলল,সোমলতা তোমরা সুখী হও।
রত্নাকর সিড়ি বেয়ে উপরে এসে নিজের ঘরে শুয়ে পড়ে।মনোরমা ছেলেকে বললেন, এই অবেলায় শুয়ে পড়লি?শরীর খারাপ লাগছে?
--না।
কপালে হাত দিয়ে বললেন,না কপাল তো ঠাণ্ডা।তাহলে কি মন খারাপ?
রত্নাকর মায়ের হাত চেপে ধরে উঠে বসল।মনোরমা বললেন,রান্না হয়ে গেছে,স্নান করে খেয়ে নে।
--মা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--তোর কি হয়েছে বলতো?
--তুমি বাবাকে খুব ভালবাসতে?
--এ আবার কি কথা?
--বাবাকে তোমার মাঝে মাঝে মনে পড়েনা?
মনোরমা গম্ভীরভাবে বললেন,না।
--একদম ভুলে গেছো?
--না।যে মনে আছে তাকে মাঝে মাঝে কেন মনে পড়বে?
মনোরমা দ্রুত উঠে চলে যেতে যেতে বললেন,স্নান করে নে।আড়ালে গিয়ে আঁচলে চোখ মুছলেন।
রত্নাকর খেতে বসে কেমন অন্যমনস্কভাবে ভাত নাড়াচাড়া করে। মনোরমা জিজ্ঞেস করলেন,তোর কি হয়েছে বলতো?
রত্নাকর মুখ তুলে বলল,কাল রাতে সঞ্জয়ের মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।
--কি হয়েছিল?
--আমার সঙ্গে দেখা হয়নি।ভাবছি একবার দেখে আসি।
বাবা নেই কত বছর হয়ে গেল।মা এখনো সেই স্মৃতি আকড়ে বসে আছে।এই সম্পর্ক কি প্রেম?কখনো তার মনে হয়নি সোমলতার কথা,তাকে জড়িয়ে বন্ধু-বান্ধবরা মজা করতো।সঞ্জয়ের বাড়ি গিয়ে খোজ নিতে টুনি বেরিয়ে এসে বলল,ও রতিদা?দাদা তো বাড়ী নেই।
--মাসীমা কেমন আছে?
--মাকে নিয়ে দাদা আল্ট্রাসোনগ্রাফী করাতে গেছে।
--কোথায় নিরীক্ষাতে?
--হ্যা আসার সময় হয়ে এল,তুমি বসবে?
--না আমি এগিয়ে দেখি।
নিরীক্ষা বাস রাস্তার ওদিকে,এ অঞ্চলে সবাই ওখানেই যায়।নিরীক্ষায় পৌছে দেখল সঞ্জয় মাথা নীচু করে বসে আছে।তাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,এইমাত্র ঢোকালো।বাবাকে জোর করে কাজে পাঠিয়েছি।কাল রাতে যা ধকল গেল কি বলব।কথা বলতে বলতে দেখল একটা ছোট দরজা দিয়ে মাসীমাকে ধরে একটি লোক বাইরে চেয়ারে বসিয়ে দিল।সঞ্জয় বলল,রতি তুই দাড়া আমি একটা রিক্সা নিয়ে আসি।
রত্নাকর মাসীমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মায়ের কথা মনে পড়ল।মাও মাসীমার বয়সী হবে।মার যদি এরকম কিছু হয়ে যায় ভেবে শিউরে উঠল। সঞ্জয় রিক্সা নিয়ে আসতে মাসীমাকে ধরে রিক্সায় তুলে দিল।সঞ্জয় অস্বস্তি বোধ করে।রত্নাকর বলল,ঠিক আছে তুই যা।আমি হেটেই চলে যাবো।
রত্নাকর হাটতে থাকে।সোমলতা আর সোমনাথ দুজনের নামে মিল আছে।ওরা পরস্পরকে পছন্দ করে।একে নিশ্চয়ই প্রেম বলা যায় না।বিয়ে হলে সুখী সংসার হবে।একজন আরেকজনের কথা ভাববে।আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে খেয়াল হয় জনার বাড়ীর কাছে চলে এসেছে।বারান্দায় রেলিং এ কনুইয়ের ভর দিয়ে ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে জনা।তার জন্য অপেক্ষা করছে ভেবে ভাল লাগল। রূপোলি রঙের সার্টিনের গাউনে আলো পড়ে ঝিকমিক করছে।উপর দিকে তাকাতে হাসি বিনিময় হয়।মোবাইল টিপে সময় দেখল দুটো বাজে প্রায়।রত্নাকর পায়ে পায়ে উপরে উঠে এল।রত্নাকরের এসময় একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় দরকার।

zainu98
Posts: 10
Joined: 13 Oct 2014 16:05

Re: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা\\কামদেব

Unread post by zainu98 » 11 Sep 2016 22:53

rapchik story baba.. Pic bhi lga diya kro beach beach mai..

Post Reply